আজ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরগঞ্জ সদরের পল্লীতে একটি পরিবারকে বাড়িছাড়া ও লুটপাটের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: আমার বাবারে কতদিন দেহি না তারে আইনা দেও তুমরা। বাবার জন্য সারা রাত ঘুমাতে পারি না। এমন হাউ মাউ করেই কান্না করে বুক ভরা আর্তনাদ করছিলেন ৭৫ বয়সী বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন। শুধু তিনিই না তার সাথে বউমা শামসুন্নাহার ওরফে নাহার,ছেলে দেলোয়ার হোসেন, নাতী মোঃ রাজীবও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের আর্তনাদ নিজের বাড়িতে নিজেদের ঠাই মিলছে না। বাড়িঘরে প্রবেশ করতে পারছে না প্রতিপক্ষের প্রাণ নাশের হুমকিতে। ফলে বাড়িছাড়া হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের বিডি মিটিং জোনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ রাজিব মিয়া। তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই নিরীহ মানুষ মুক্তি পেতে পারে সে আশা প্রত্যাশা আমাদের। আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ লিখনির মাধ্যমে ও অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। আজ অত্যন্ত নিরুপায় হয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। আমার বাবা আকবর হোসেন ও ভাই সজিবকে জেলে রেখে কথা বলার মত মানসিকতাও নেই। এরপরেও আপনাদের সামনে দুয়েকটি কথা না বলে পারছিনা। গেলো বছর ঘটনার দিন আমি একজন কুরআনের হাফেজ হয়ে একটি মাদরাসায় পড়াশোনা অবস্থায় ছিলাম। আমার বাবার সাথে বিবাদীদের মধ্যে মারামারির কোনো ঘটনাই আমি জানি না। এমনকি ঘটনার দিন আমি ঘটনাস্থলে ও আমাদের বাড়িতেও ছিলাম না। এরপরেও আমাকে ষড়যন্ত্র করে হিংসার বশবর্তী হয়ে একটি চক্রটি এম্বার হত্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লিপ্সায় রয়েছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়ে ঘটনার সুবিচার প্রার্থনা করছি। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ দামুয়ার বাড়িতে এলাকায় বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে হামলায় আহত হওয়ার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমদাদুল হক এম্বর (৫০) এর মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমিসহ আমাদের পরিবারকে মামলায় জড়িয়ে আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে একটি কুচুক্রি মহল। আমরা এর থেকে পরিত্রান পেতেই আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।

কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের রশিদাবাদ ইউনিয়নের দামড়বাড়ির মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আকবর হোসেনের চাচা মৃত আফতাব উদ্দীনের ছেলে এমদাদুল হক এম্বারের বাড়ির সীমানা নিয়ে দীর্ঘ বছর যাবত বিরোধ চলে আসছিল। উভয় পক্ষ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ দরবারে আকবর হোসেনকে জায়গা জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৯ শতাংসের পৈত্রিক ভূমিতে আকবর হোসেন কয়েক বছর আগে বাসা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। অপরদিকে আকবরের পিতার কাছ থেকে একই দাগে ৫ শতাংস জায়গা ক্রয় করেন এমদাদুল হক ও আনোয়ার হোসেন। এমদাদুল হক জায়গা ক্রয় করে বিদেশে পাড়ি জমান। সেখানে হার্টের সমস্যাসহ কঠিন অসুখ দেখা দেয়ায় আবার বাংলাদেশে ফেরৎ এসে আমার দাদা থেকে ক্রয়কৃত জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। আমাদের ঘড়ের সীমানা ঘেসে তিনি বাথরুম তৈরী করলে এ নিয়ে আমার পিতা আকবর প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তার উপর চরাও হন। এ নিয়ে আমার পিতা আকবর হোসেন গ্রামীণ সালিশ দরবারে বিচার প্রার্থী হন। প্রতিপক্ষরা শালিস বিচার না মেনে আরও উত্তেজিত হন ও নানাভাবে হয়রানী করে আমাদের সম্পদ গ্রাস করার চক্রান্তে লিপ্ত হন। এরই মধ্যে ২০২১ সালের মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে আমার পিতা আকবর হোসেন এম্বারের দেওয়া বাথরুমের দুর্গন্ধ এড়াতে আমাদের বাসার চতুর্দিকে প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরী করছিলেন। এতে এমদাদুল হক এম্বার প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বাবার কাজে বাঁধা দেন এবং আমাদের সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণে উনার বাসার

জানালা আড়াল হয়ে যাবে মর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে বাবার প্রতি চড়াও হন। এমনকি দেয়াল করতে করতে দেবে না বলে তার ঘড়ের জানালা দিয়ে আমার পিতা আকবর হোসেনকে ঢিল ছুড়ে মারেন। এতে আমার পিতা আকবর হোসেন বাশ দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে এম্বার শাবল দিয়ে তার ঘড়ের জানালা দিয়ে বাবাকে মেরে ফেলার জন্য আক্রমন করেন। বাবা আকবর হোসেন সে আক্রমন প্রতিরোধ করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই অসুস্থ এম্বার মাথায় ঘুরান দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মাথায় গুরুতর আহত হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এমদাদুল হক এম্বারকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার চার দিন পর ২০২১ সালের শুক্রবার (২১ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।এমদাদুল হক এম্বার আহত হওয়ার পর ঘটনার দিনই তার স্ত্রী আয়েশা বাদী হয়ে আমাকে ও আমার মা নাহার, আমার পিতা আকবর হোসেন, ভাই সজিব, চাচা দেলোয়ার হোসেনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা নং-২৯ (০৫) ২০২১ দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ মামলায় ৩০২ ধারা যুক্ত করে হত্যা চেষ্টা মামলার বদলে হত্যা মামলা হিসেবে চার্জশিট প্রদান করেন। এ মামলার আসামী ছাড়াও আমাদের সকল আত্মীয় স্বজনকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছেন তারা। আমার আংকেল নজরুল ইসলামকে তারা পুলিশে দিয়ে দিনরাত পর্যন্ত থানায় আটকে নির্যাতন করেন। আমার ভাইকেও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেন। আমরা নীরীহ সাধারণ মানুষ। বাবা পুরান থানায় আকবর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ দিয়ে আমাদের সংসার পরিচালনা করতেন। তাদের সাথে কোনো সময়েই ঝগড়া বিবাদ না করে বরং আমরা আমাদের আরও কিছু জায়গা ছাড় দিয়ে বাসার প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরী করতেছিল। এই দেয়াল তৈরী করতে গিয়ে এমদাদুল হক এম্বার বাধা দেন এবং আমাদেরকে দেখে নেবে বলে হুমকি প্রদর্শন করেন। ঘটনার দিন আমার পিতা আকবর হোসেন দেয়ালের কাজ করা অবস্থায় তারা ৬ ভাই ও তাদেও স্ত্রী আতœীয় স্বজন দলবদল নিয়ে আমাদের ঘরে অনধিকার চর্চা করে অনুপ্রবেশ করে ঘড়ের দরজা জানালা ভাংচুর চালিয়ে ঘরের ভেতরে আলমীরাতে থাকা আমার মাতার দু ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা পয়সা ও বাসার প্রায় ৭ লাখ টাকার যাবতীয় আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। বাসার কাছে ১৪ শতাংশ জমিতে থাকা ৪ লাখ টাকার পেপে লুট করে নিয়ে গেছে। প্রায় ১ বছর যাবত বাড়ি ছাড়া হয়ে ফেরারী জীবন যাপন করায় তারা আমাদের যাবতীয় মালামাল ও আসবাবপত্র নিয়ে গেছে।

গত ২৪/০১/২০২২ তারিখে আমরা বিজ্ঞ আদালতে হাজির হলে আদালত আমাদের ৫জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। প্রায় ২ মাস হাজতবাস করার পর গত২৪/০৩/২২ তারিখে আমিসহ আমার মা নাহার বেগম ও আমার চাচা দেলোয়ার হোসেন গং জামিনে মুক্তি লাভ করে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বের হয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকি। এমতাবস্থায় গত ১/০৪/২২ তারিখে আমিসহ আমার মা নাহার বেগম ও আমার চাচা দেলোয়ার হোসেনগণ আমাদের ঘরবাড়ি দেখাশোনার জন্য রশিদাবাদ দামোয়ার বাড়ি সাকিনস্থ আমাদের বসত বাড়িতে যাওয়া মাত্রই এমদাদুল হকের ছেলে রাব্বি,আফতাব উদ্দিনের ছেলে দুলাল ও আনোয়ার, এমদাদুলের স্ত্রী আয়েশা, দুলাল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার গং দেশিয় অস্ত্রাদি নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেবে না বলে হুমকি দেয় এবং খুন করে ফেলবে বলে শাসায়। আমার চাচা দেলোয়ার প্রতিবাদ করলে তারা আমার চাচাকে বেদম প্রহার করে। আমার মাতাকে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। আমরা দৌড়াইয়া আমাদের বাড়ি হতে পাশবর্তী পিয়াস এর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। আমিসহ আমাদের পরিবারের লোকজন আমাদের বসত বাড়িতে গেলে আমাদেরকে খুন করে ফেলবে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার মা পিয়াসদের বাড়ি থেকে চলে আসার সময় বিবাদীরা মারপিট করার উদ্দেশ্যে আমার মাকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখে। আমি কৌশলে পালাইয়া আসি।

বিষয়টি আমি আত্মীয় স্বজনকে জানাইয়া কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় গিয়ে গতকাল একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে তারা আমাদেরকে মেরে ফেলার জন্য নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে। আমাদের জীবন বিনাস করবে বলে তারা অনবরত হুমকি দিচ্ছে আমরা প্রাণ ভয়ে বাড়িছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাবন করছি। আর এ সুযোগে তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাসার ক্ষতিগ্রস্ত করে উল্টো আমাদেরকে আরও মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে সুবিচার প্রার্থনা করছি। নীরিহ পরিবারের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিশোরগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ